নঈম আল ইস্পাহান
সবেমাত্র চার প্যাগ শেষ করেছি।নেশাটা মনে হচ্ছে একটু একটু ধরেছে।সিগরেটের প্যাকেটে মাত্র দুটো সিগরেট আছে।টেনশানে পড়ে গেলাম।দুটো সিগরেটে পুরো রাত কিভাবে কাটাবো ভাবতেই বেহাল দশা।বার দুয়েক কলিংবেলের শব্দ হলো।কে আসলো এতো রাতে?চুর ডাকাত নইতো আবার…
দরজা খুলে একটু অবাক হলাম।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।মনে হচ্ছেনা এখনো মাতাল হয়েছি।মাতাল হলে সব উল্টা পাল্টা দেখতাম।তাহলে কি এটা আমার ভ্রম!
-আমার দিকে হা করে তাকিয়ে না থেকে বাসায় ডুকতে বলবে?আমি তোমার শিখা।কোন ভূত,প্রেতাত্মা নই।
-আই এ্যাম স্যরি।ভেতরে আসো।
শিখা হলুদ সিল্কের শাড়ি পরেছে।ব্লাউজ টাও ম্যাচিং করা আছে।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।চোখে কাজল।শাড়ির ভাঁজ ঠিকমতো হয়নি।বুঝা যাচ্ছে সে এখনো অপরিপক্ব।হঠাৎ চোখ পড়ল তার অনাবৃত পেটের উপর।অদ্ভুত এক শিহরণ হলো।মেদ আগের তুলনায় হালকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।ইচ্ছে করছে তার পেটে স্পর্শ করতে।কিন্তু,এখনই না।তবে চোখ সরাতে ইচ্ছে করছেনা।খুব ভালো লাগছে।সারারাত এভাবে কাটিয়ে দিতে আমার কোন আপত্তি নেই।
-অভদ্র একটা…আসা মাত্র তোমার লুচ্চামি শুরু হয়ে গেছে?
-কই,না তো।কি যা-তা বলছো।
-ঠিকই বলেছি।
-আচ্ছা,ঝগড়া বাদ।তুমি এত রাতে কিভাবে আমার বাসায় এলে?
-সমস্যা,কোন?ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।
-আরে,না।আর জিজ্ঞেস করবোনা।
-তুমি মদ খাচ্ছিলে?
-হুম,তোমাকে যখন খুব মনে পড়ে,ভোলার চেষ্টা করতে দু-চার প্যাগ খেয়ে ফেলি।
-এসব পাগলামি না করলেই কি নই?
-আর,তুমিও কি আমাকে ছেড়ে না গেলে হতোনা?
-কি করবো বলো,আমি নিরুপায় ছিলাম।ফ্যামিলির প্রচন্ড চাপ ছিলো।তোমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ রাখলে আমার পড়ালেখা বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দিবে।
-আচ্ছা,তোমার এইম ইন লাইফ কি?
-বাড়ির সবার স্বপ্ন আমি একদিন বিসিএস হবো।আমারও তাই।আচ্ছা,তোমার এইম ইন লাইফ কি?
-কোন ভালো রেষ্টুরেন্টে জীবনে অন্তত একবার তোমার সাথে বসে এক কাফ কফি খাবো।
-এটা কখনোই সম্ভব না।কেউ দেখে ফেললে বাবা-মাকে বলবে।আর তারা জানলে আমার পড়ালেখা বন্ধ করে দিবে।
-হুম,বুঝেছি।
-কি বুঝেছো?
-সবার সব স্বপ্ন পূরণ হয়না।
-তুমি কি সারারাত এভাবেই কাটিয়ে দিবে?
আমি আর কোন কথা বললাম না।শিখার খুব কাছে গিয়ে থামলাম।প্রথমেই হাত রাখলাম তার পেটে।খেয়াল করলাম শিখার চোখ বন্ধ।বুঝতে পারলাম সে কি চাইছে।আমি ঠিক তাই করলাম,যা যা আমরা দুজনেই চেয়েছি।
রাত কখন কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।
ভোরবেলা দু-চোখ জুড়ে প্রচন্ড ঘুম নেমে আসলো।শিখাকে খুব শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।এই মুহূর্তে আমার কোন ভয় নেই।ভয় নেই তাকে হারানোর।শিখা শুধুই আমার।আর কারো নই।
সকাল দশটায় আমার ঘুম ভাঙলো।পাশে শিখাকে দেখতে পেলাম না।হয়তোবা বের হবে বলে,রেডি হচ্ছে।বড় গলায় দু-বার শিখার নাম ধরে ডাকলাম।কোন সাড়া না পাওয়াতে প্রথমে গেলাম পাশের রুমে।বাথরুমের দরজা খোলা।সেখানে কেউ নেই।রান্না ঘরেও শিখা নেই।দৌড়ে দরজায় এলাম।দরজা ভেতর থেকে লক দেয়া।আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা কাল রাতে কি হয়েছিল।মদটা মনে হয় বেশিই খেয়েছিলাম।তড়িদগতিতে মোবাইল নিয়ে শিখার নাম্বারে ডায়েল করলাম।অপর প্রান্ত থেকে এক মহিলা বললো,আপনার ডায়েলকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে।হয়তোবা শিখা কারো সাথে কথা বলছে।আরো তিনবার ডায়েল করলাম।প্রতিবারই অপরপ্রান্ত থেকে মহিলাটি একই কথা বলল।মনে পড়লো,ঠিক এগারো মাস আগে শিখা আমার নাম্বারটি ব্ল্যাকলিষ্টে দিয়েছিল।আগামী মাসের পঁচিশ তারিখ আমাদের ব্রেকাপের এক বছর পূর্ণ হবে।
নঈম আল ইস্পাহান ,কক্সবাজার সরকারি কলেজ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।